মানুষকে বিভ্রান্ত করতে আমার খুব ভালো লাগে। তবে সবাইকে না, যাদের প্রতি আমার ভালবাসাটা বেশি, তাদের বিরক্ত করতেই যে ভালো লাগে। একবার এমন হইলো যে, একজনকে বিভ্রান্তে ফেলতে যেয়ে নিজেই বিপাকে পরে গেলাম। আমি তো আর বলতে পারছি না যে সব ই ক্ষণিকের বিনোদনের জন্য করা। তার কিছু কাল্পনিক দৃশ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
__ মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম, ইদানিং খুব দেরি করে ঘুম থেকে উঠতে হয়। ছোট বেলায় ফজরের আজান দেওয়ার সময় ঘুম ভাঙ্গত । তারপর কি ঠাণ্ডা আর কি গরম, সরাসরি যেতাম মানুষকে বিভ্রান্ত করতে, কখনো এই বাসার একটা কলিং বেল, তো অন্য বাসার সবগুলো কলিং বেল। তারপর দে দৌড়!!! এখুন শাস্তি সুরূপ মনে হয় আমাকে প্রতিদিন দেরিতে ঘুম থেকে উঠতে হচ্ছে।
হটাত ফোনে জোরে রিংটোন বেজে উথলো। এই অসময়ে আবার কিসের এলার্ম? ৩ঃ৫৫ বাজে, এই কপাল আজকের পরিক্ষা কি মিস করে ফেললাম? ১১ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত পরিক্ষা ছিল। আগের দিন রাতে অনেক পরেছি। প্রতি সেমিস্টারে এই কয়টা দিনই তো পরি। যাকগে, পরিক্ষা মিস হইলো কিনা সেটা নিশ্চিত করার জন্য দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম, ১১ টা ১৮ বাজে। হাই কপাল, আমাকে আর কে দেখে। তড়িঘড়ি করে ১১ টা ২৯ এ পরিক্ষার হলে গেলাম, এমনি সময় কাম্পাসে জেতে ২০ মিনিট লাগে আজকে কিভাবে যেন তারাতারি চলে এসেছি। পরিক্ষার হলে স্যার বসে আছেন ।
স্যার আসতে পারি?
__ এতো লেট কেন? স্যার আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি স্যার এর জুতোর দিকে তাকিয়ে আছি, সর মনে হয় আজকে আসার সময় জুতোজোড়া পালিশ করিয়ে এনেছেন। আয়নার মত চকচক করছে। স্যার যেভাবে ফরলাম হয়ে এসেছে, মনে হচ্ছে মাল্টিন্যাশনাল কোন মিটিং এর জন্য কয়েকশ কোটি টাকার লেনদেন করবেন। স্যার আমাকে প্রশ্ন করলেন আবার তুমি এতো লেট করে এসেছ কেন?
__ স্যার, কাল রাতে অনেক পড়াশোনা করেছি, আজ সকালে ঘুমানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না। সব পরা শেষ করে একটু জাস্ট বিছানাতে বসছিলাম। তারপর আমি এখুন এখানে স্যার।
__ নিয়ম অনুযায়ী তোমার পরিক্ষা দেওয়ার অনুমতি নেই, এতো লেট করে এসেছ।
__ স্যার এর কথা শুনছি আর অন্নদিকে ব্যাগ থেকে প্রবেশপ্রত্র আর কলম বের করে দাঁড়ালাম। হাত বাড়িয়ে এমন একটা ভঙ্গিমা করলাম, যে আমি খুব বড় অপরাধ করেছি, আমাকে তাও বেকুসুর খালাস করে দেন।
__ স্যার প্রশ্নপ্রত্র আর খাতা দিলেন, আর বললেন তারাতারি যাও লিখা সুরু কর। ১নং প্রশ্ন টা বাধ্যতামূলক সেটাও স্যার বলে দিলেন। আজ শেষ পরিক্ষা বলে হয়তো পরিক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল ।
__ আমি বলছি, স্যার আজকে আপনি যে কয়েকশো কোটি তাকা বিনিয়োগ করবেন, পুরো টা লাভ সহ উঠে আসবে। তারপর টেবিলে বসে, খাতা খুলে খুব তারাতারি নাম, আইডি, সেশন, লিখলাম, তারপর দেখি তারিখ মনে নাই, আজকে কি বার সেটাও মনে নাই। যতো তাড়াহুড়া করছি, ততই দেড়ি হচ্ছে। টাই আর রিক্স নিলাম না, পিছের জনের খাতা দেখে তারিখ আর দিন লিখলাম। পুরো প্রশ্নটা একবের দেখে ভালো লাগছে সবগুলো কমন পরেছে, কিন্তু সময় যেন স্বাভাবিকের খুব তারাতারি জাচ্ছে। শেষ থেকে একটা প্রশ্ন লিখা শুরু করলাম। এর মদ্ধে আবার হটাত করে মনে হইলো ফোনে আবার এলার্ম বেজে উঠবে না তো?! আগের ২ দিন পর পর ১২.০০ টা তে এলার্ম বেজে উঠেছিলো। ১ম দিন একজন শিক্ষিকা পড়েছিলো, প্রিয় শিক্ষক ছিল বলে ওয়ার্নিং দিয়ে মাফ করে দিয়েছিল। কিন্তু পরের দিন স্যার বললেন, যদি আমি নেক্সট দিন এই রুমে গার্ড এ পরি, আর যদি তোমার ফোনের এলার্ম বাজে? তোমাকে এক্সফেল করে দিবো। আর বলেছিল, আজকে এই রুমে যে গার্ড নিবে তাকেও বলে রাখবে। এটা ভেবে মনে হচ্ছে বার বার, আমার মোবাইল টা কি বন্ধ করেছি?! এটাও ভুলে জাচ্ছি। আবার, রিস্ক না নিয়ে, স্যার কে ক্যালকুলেটর নেওয়ার নাম করে বাগের কাছে গেলাম। ব্যাগ এ হাত দিয়ে মোবাইল থেকে ব্যাটারিটা খুলে ফেললাম, আর আমার ক্যালকুলেটর টা নিয়ে চলে আসলাম।
__ স্যার বললেন ১ ঘণ্টা শেষ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সত্যি ১ ঘণ্টা শেষ। আমার কেবল ১ টা প্রশ্নের অর্ধেক টা লিখা হয়েছে। আবার রিস্ক না নিয়ে সুপার কমন প্রশ্নের উত্তর লিখা শুরু করলাম। সেদিন এর পরিক্ষায় কি লিখলাম আর কি বাদ গেলো সেটাও হিসাব করার সময় পাইনি শেষ পর্যন্ত।
পরিক্ষার শেষ। লম্বা ছুটি পাবো সেই খুশিতে, আমি ভুলে গেলাম যে আমার পরিক্ষা খারাপ হয়েছে। সবাইকে বিভ্রান্ত করা শুরু করলাম। যে জিজ্ঞাসা করছে! পরিক্ষা কেমন দিয়েছি আমি বলি খুব ভালো হয়েছে পরিক্ষা। আমি বিভ্রান্ত করতে যখন শুনছি প্রশ্ন খুব সহজ হয়েছে, পরিক্ষা ভালো কেন হবে না!!? আমি তখন আর হিসাব মিলাতে পারি না। কতো মার্কের উত্তর দিয়েছিলাম আজকে।
আমি বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করে টপিক চেঞ্জ করে বললাম, ক্লাস পার্টি করব না? জানুয়ারী তে ক্লাস শুরু হইলে করতে হবে, আর ট্যুর দিতে হবে, অনেক ঘুরতে হবে। শীতকালে বাসার ছাঁদে বার-বি-কিউ পার্টি হবে। কবে করবা সবাই?
Comments
Post a Comment